আমলকী গাছ মাঝারি ধরণের ১২-২৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। শাখাপ্রশাখা স্বল্প। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সরল পাতা এমনভাবে সজ্জিত থাকে যে , মনে হয় পাতা পক্ষল যৌগিক। ফুল পীতাভ সবুজ। ফল গােলাকার, গায়ে খাঁজ কাটা, মাংসল, রসালাে এবং আঁশযুক্ত। শুষ্ক ফল কালাে বর্ণের হয়। বসন্তকালে ও শরষ্কালে ফল হয়। অর্থনৈতিকভাবে এটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ঔষধি উদ্ভিদ।
প্রাপ্তিস্থান: ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বাড়ির আশেপাশে ও বাগানে লাগানাে অবস্থায় পাওয়া যায়। ব্যবহার্য অংশ- কাঁচা ও শুকনাে ফল ও বীজ ব্যতিত পাতা।
লােকজ ব্যবহার: মস্তিষ্ক, হৃৎপিন্ড ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক। আনন্দদায়ক, হজমকারক, বমন ও পিপাসা নিবারক। ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, এবং ভিটামিন বি এর অভাবজনিত রােগসমূহে ফলপ্রদ। আমলকী রসায়ন বর্গে একটি উৎকৃষ্ট ফল।
চাষাবাদ পদ্ধতি: মার্চ-এপ্রিল বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। পরিপক্ব ফল সংগ্রহ করে ৬-৭ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ফলের রসালাে অংশ পড়ে যাওয়ার পর হাত দিয়ে কচলিয়ে বীজ সংগ্রহ করতে হয়। বীজ বপনের পূর্বে ৫-৬ ঘণ্টা হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে তা বপন করতে হয়। চারা গজাতে কমপক্ষে ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগে। বংশ বিস্তারের জন্য কাটিং এবং গুটিকলমও ব্যবহার করা যায়।
চারা রােপণ ও অন্যান্য পরিচর্যা: এটি প্রায় সব রকমের মাটিতেই চাষ করা যেতে পারে তবে সম্পূর্ণ বেলে মাটি আমলকী চাষের উপযােগী নয়। এটি শুষ্ক অঞ্চলেও ভাল জন্মে। চারা বর্ষার শুরুতেই নির্ধারিত স্থানে লাগাতে হয়। মে-জুন মাসে ১৫ ফুট x ১৫ ফুট দূরত্ব রেখে ৩ ফুট দৈর্ঘ্য, ৩ ফুট প্রস্থ এবং ৩ ফুট গভীরতার গর্ত তৈরি করে ১৫-২০ দিন সূর্যালােকে উন্মুক্ত রেখে দেয়া হয়। কলমের চারা রােপণ করার পূর্বে উক্ত গর্তে প্রচুর পরিমাণে গােবর সার মিশ্রিত জমির উপরিভাগের মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। গ্রীষ্মকালে চারা গাছে ১৫ দিন অন্তর অন্তর পানি দিতে হবে যতক্ষণ না চারা স্থায়ীভাবে বেড়ে ওঠে।
এছাড়াও বয়স্ক এবং ফলন্ত গাছে প্রয়ােজনমত পানি দিতে হবে, অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে ২০ দিন অন্তর অন্তর পানি দিলে তা অধিক ফল ধারণে সাহায্য করে। ডিসেম্বরের শেষে গাছ থেকে মরা এবং রােগাক্রান্ত ডাল কেটে বাদ দিয়ে সুস্থ ডালপালা বেড়ে ওঠার সুযােগ করে দিতে হবে। গ্রীষ্মকালে গাছের গােড়ায় ১-১.৫ ফুট পর্যন্ত শুকনাে খড় দিয়ে মালচিং করতে হবে।
রােগবালাই ও অন্যান্য সমস্যা: গাছের কাণ্ডের ছাল ভক্ষণকারী কাটুই পােকা গাছের কাণ্ড খেয়ে ফেলে। এছাড়াও আমলকী গাছে মরিচা পরা রােগ দেখা দিতে পারে নিমের খৈল অথবা নিম পাতার রস পানির সাথে ১ : ৪ অনুপাতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে কিংবা গাছের গােড়ায় ধূপ দিয়ে ক্ষতিকর পােকামাকড় দূর করা যায়। প্রয়ােজনে এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
সংগ্রহ ও সংরক্ষণ: গাছ লাগানাের ৪-৫ বছরের মাথায় ফল আসে। ফল হালকা সবুজ হতে সবুজাভ হলুদ অথবা লাল ইটের মত রং ধারণ করলে বুঝতে হবে ফল সংগ্রহ করার সময় হয়েছে। ফল সংগ্রহের সর্বোত্তম সময় হল ফেব্রুয়ারি মাস। কারণ এই সময়ে ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে।